বইমেলা একটি সাংস্কৃতিক মিলনমেলা


মো: আল শাহারিয়া সুইট
ডিআইইউ প্রতিবেদক,
একটি বইমেলার মাধ্যমে আমরা শুধু নতুন বইই খুঁজে পাই না, বরং বইয়ের প্রতি আমাদের ভালবাসা, সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা, আর বইয়ের জগতে নতুন দিগন্ত খোলার সুযোগও পান। বইমেলার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি শুধু একটি বইয়ের মেলা নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক মিলনমেলা। এই মেলায় নানান ধরনের সাহিত্যিক অনুষ্ঠান, সেমিনার, কবিতা পাঠ, আলোচনা অনুষ্ঠান ইত্যাদি হয়ে থাকে।
বইমেলার গল্পকথা নিয়ে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের মোঃ সিদরাতুল মুনতাহা রাকিন জানান,
এইযে বইমেলা শেষ হতে চলল! রবি ঠাকুরের ভাষায় “গঙ্গার ওপারে ওই নতুন চাঁদ, আর এ পারে তুমি আর আমি, এমন সমাবেশটি অনন্তকালের মধ্যে কোনদিনই আর হবে না !” আসলেই তো তাই ! এ বছরে আর তো কোন বই মেলা অনুষ্ঠিত হবে না।
মনে হল সেই সকালে সবচেয়ে সুন্দর পাঞ্জাবি টা পড়ে বের হয়েছি বইমেলার উদ্দেশ্যে প্রিয়তমার সাথে দেখা করব আর কিছু বই কিনবো তাই। সেই সকাল থেকে নিয়ে শুরু করে রাত অব্দি যে কি ভাবে কেটে যায় তাই বোঝা কঠিন । শুধু রাতের সময় যখন বাড়ি ফিরতে হয় তখন বোঝা যায় কত সুন্দর ই না মুহূর্তগুলো কাটল!
ঠিক তেমনি মনে হয় , বইমেলা শুরু হয় যেন সবচেয়ে সুন্দর পাঞ্জাবি টা পড়ে বাসা থেকে বের হওয়া মানুষের মত। আর শেষ হয় প্রিয়তমার সাথে সারাটা দিন কাটিয়ে বাড়ি ফেরার মত । আর থাকে কেনা হাতে কিছু বই । মুহূর্তে কেমন যেন শুরু হতেই শেষ হয়ে যায়। রেখে যায় ভালবাসার স্মৃতিও স্মৃতিচিহ্ন । ঠিক শ্রী শরৎচন্দ্রের ভাষায় বলা যায়”ভালোবাসার স্মৃতি ও স্মৃতিচিহ্ন বড়ই মধুর” ।
এই বাক্যটি যেন ” বইমেলাকে “উৎসর্গ করে অনায়াসেই বলা যায়।
অথবা সমরেশ মজুমদার স্যারের ভাষায় একথাও বলা যেতে পারে যে
“আমি চোখ বন্ধ করলাম। আমার চেখের সামনে অন্ধকার।
কিন্তু কখনও কখনও অন্ধকারও মানুষের আপন হয়।”
একই বিভাগের শিক্ষার্থী সুইটি পালমা বলেন, বইমেলা এক শতাব্দী থেকে অন্য শতাব্দীর মানুষের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়।
হাসলে মেয়েদের সুন্দর লাগে।হাসি চেপে রাখলে তারচেয়ে দশগুন বেশি সুন্দর লাগে।হুমায়ুন আহমেদ তার অপেক্ষা বইয়ে লিখেছিলেন। তোমাকে দেখেও তাই মনে হচ্ছে। তোমার ঐ বাঁকা দাঁত লুকাতে পারছো না,কেন হাসছো তাও বলতে পারছো না।চলো সামনে চায়ের দোকানে বসি।চা খেতে খেতে ইন্দ্র হঠাৎ বলে উঠলো- যাহাকে ভালোবাসি সে যদি ভালো না বাসে,এমনকি ঘৃণাও করে তাও বোধ করি সহ্য হয়।
কিন্তু যাহার ভালোবাসা পাইয়াছি বলিয়া বিশ্বাস করেছি, সেইখানে ভুল ভাবিয়া যাওয়াটাই সবচেয়ে নিদারুণ। পূর্বেরটা ব্যাথা দেয় কিন্তু শেষেরটা ব্যাথাও দেয়,অপমানও করে।জানো অনন্যা,কথাটা কে বলেছিলেন? শরৎচন্দ্র বলেছিলেন।
এইযে আজকে বইমেলাতে আসলাম,এই বইমেলায় যে এত এত বই রয়েছে- বইগুলো মানুষের অনুভুতির ঘরে প্রবেশ করার চাবি। কবিদের এক অদ্ভুত শক্তি রয়েছে।কবিরা যে লিখেন,কীভাবে যেন আমাদের জীবনের সাথে মিলে যায়। বইমেলা এক শতাব্দী থেকে অন্য শতাব্দীর মানুষের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়।বইমেলা যে জাতিকে জীবন্ত, সৃজনশীল ও বৈচিত্র্যময় করার আমন্ত্রণ জানায়,এই আমন্ত্রণে সকলে যে সাড়া দিয়ে আসে এমনটা নয়।
উদ্দেশ্য যাই হোক তবুও আমি চাই প্রত্যেকে বইমেলাতে আসুক,কারণ বই দেখতে দেখতে একটি শব্দ , একটি পাতাও মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি। তাই চাই বইমেলা জমজমাট ও সমৃদ্ধি হোক লেখক ও পাঠকে।আচ্ছা অনন্যা! তুমি কেন বইমেলাতে আসো??
বইমেলা শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির এক মহতী উদ্যোগ। এই মেলা আমাদের চিন্তা এবং জ্ঞানের প্রতি আগ্রহকে আরো গভীর এবং সৃজনশীল করে তোলে।