সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ০২:৪১ অপরাহ্ন
Headline
অধ্যাপক সি আর আবরারের পরিচয়
/ ৮ Time View
Update : বুধবার, ৫ মার্চ, ২০২৫, ৩:১৯ অপরাহ্ন

অধ্যাপক সিআর আবরার ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ী গোপালগঞ্জ জেলার পাইকান্দিতে অবস্থিত। ওনার বাবা ছিলেন একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। গত শতাব্দীর ৪০, ৫০, ৬০ ও ৭০-এর দশকে ঢাকার অভিজাত এলাকা ওয়ারীতে অবস্থিত পৈতৃক বাড়িতে অধ্যাপক আবরার একজন ঢাকাইয়া হিসাবে বেড়ে উঠেছে। তাঁর নানা প্রথম প্রজন্মের মুসলিম লীগ নেতা আব্দুল্লাহ জহিরুদ্দিন উদ্দিন লাল মিয়া ছিলেন ফরিদপুরের বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

ডা. আবরার একজন সমাজ সচেতন মানুষ। সারা জীবন তিনি উচ্চ মানবিক বোধ ও প্রগতিশীল চিন্তাচেতনাকে লালন করেছেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক আন্দোলন এবং মানবাধিকার আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত থেকেছেন। কলেজ জীবন থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী আহমেদ শরীফ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আহমেদ ছফা, হুমায়ুন কবির, আবুল কাশেম ফজলুল হক প্রমূখদের সান্নিধ্যে আসেন। তাদের সহযোগী হিসাবে ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন লেখক সংগ্রাম শিবির। দেশ স্বাধীন হবার পরে লেখক সংগ্রাম শিবির রূপান্তরিত হয় বাংলাদেশ লেখক শিবিরে। সেই সময় সংগঠনটি দেশের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক সংগঠনসমূহের একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক প্লাটফর্ম হিসেবে করে। ১৯৭৮ সালে বদরুদ্দিন উমর এবং আবরার চৌধুরী যথাক্রমে লেখক শিবিরে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৭৩ সালে দেশে যখন রক্ষী বাহিনীর চরম অত্যাচার চলছিল এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হচ্ছিল, তখন বদরুদ্দিন উমর, কবি সিকান্দার আবু জাফর, ফয়েজ আহমেদ, হলিডে সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ খান প্রমুখরা মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ‘মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ এবং আইন সাহায্য কমিটি’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ছিলেন সেই সংগঠনের অগ্রসৈনিক বা ফুট সোলজার। প্রগতিশীল সেই বুদ্ধিজীবীদের উদ্যোগেই ১৯৭৪ সালে গড়ে ওঠেছিলো দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ কমিটি। ডা. আবরার দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের জন্য চাঁদা তোলা সহ সকল ত্রাণ কর্মের সাথে তৎপর ছিলেন।

এক তরফা ভাবে ইন্ডিয়া কর্তৃক গঙ্গা নদীর পানি উত্তোলনের বিরুদ্ধে ১৯৭৫ সালে মাওলানা ভাসানী ডাকে ফরাক্কা লং মার্চে যোগ দেয়া দেশপ্রেমিক প্রতিবাদীদের সংগঠক হিসেবে আবরার চৌধুরী অগ্রগণ্যদের একজন ছিলেন।

তিনি মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে মানবিক শাখায় স্ট্যান্ড করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের BA অনার্স এবং MA পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণীতে উর্ত্তীন হন। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে PhD ডিগ্রি লাভ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দীর্ঘ চল্লিশ বছর অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে শিক্ষকতা করেছেন। নিয়মিত ক্লাস নেওয়া এবং শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কারিকুলামের বাইরেও তাদের নানামুখী তৎপরতার সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন।
১৯৯১ বিদেশে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সনাতনী শিক্ষক রাজনীতির সাথে যুক্ত না হয়ে, তার সহকর্মী শাহদিন মালিক, তাসনিম সিদ্দিকী এবং সুমাইয়া খায়েরকে নিয়ে ‘Refugee and migratory movements research unit’ গড়ে তোলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীরা যেন মাঠ গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারে, সেই সুযোগ তৈরি করে দেয় এই ‘রামরু’ । প্রতিষ্ঠানটি গত ৩০ বছর ধরে অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার রক্ষার্থে বিভিন্ন ধরনের নীতি প্রণয়ন এবং এডভোকেসি কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯০ সালে অভিবাসন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন আদায় করা ছিলো ডা. আবরার এবং তাঁদের সংগঠনের উদ্যোগের ফসল।

আন্তর্জাতিক মাল্টিন্যাশনাল আর্থিক সংস্থা ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের রেমিটেন্স প্রবাহের উপরে যে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল সেটাও ভেঙে দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকে বোঝানোর ক্ষেত্রে এই ‘রামরু’র ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। এর ফলে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে এক উল্লম্ফন ঘটে। প্রতারিত বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য সালিশের মাধ্যমে সাত কোটি টাকা তুলে দিতে প্রতিষ্ঠানটি এবছরই সক্ষম হয়।

অধ্যাপক আবরার বাংলাদেশে ক্যাম্পে অবস্থানরত উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব আদায়ের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। ক্যাম্পের বসবাসকারী জনগোষ্ঠী এবং তাঁর সম্মিলিত উদ্যোগে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশনের ফলে বাংলাদেশে উর্দুভাষীদের নাগরিকত্ব বিষয়টি চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি ঘটে ২০০৮ সালে।

কোভিড দুঃসময়ে তিন দফায় দেশে ফিরে আসা অভিবাসী শ্রমিকদের যখন ‘দেশের ভাবমূর্তি’ খুন্ন করার অভিযোগে আটক করে মামলা করা হয়, ডা. আবরার ও তাঁর একদল সহযোগী তখন হাইকোর্টে রিট পিটিশন ফাইল করে আদালতের হস্তক্ষেপে তাদের মুক্ত করেন। একই রকমমের বিধিবহির্ভূতভাবে দেশে ঢোকার কারণে আটককৃত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জেলে থাকার নির্দিষ্ট সময় শেষ হবার পরেও যখন বেআইনী ভাবে তাদের আটক রাখা হচ্ছিল, তখন প্রফেসর আবরার এর বিরুদ্ধে আরেকটি রিট ফাইল করে সফলভাবে তাদের মুক্তি আদায় করেন।

ডা. আবরার নিজেকে কখনো রাষ্ট্রের স্বেচ্ছাচারিতার কাছে সমর্পণ করেননি। গত ১০ বছর গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ডিজিটাল ও সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, সীমান্ত হত্যা প্রভৃতি বিষয়ের উপরে ইংরেজি দৈনিকসমূহে দেড় শতাধিক কলাম লিখেছেন, যার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক মুক্ত বিশ্ব বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রকৃত চিত্র বুঝতে সমর্থ্য হয়েছিল।

অধ্যাপক সি আর আবরারের নেতৃত্বে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের যাত্রা শুভ হোক।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Our Like Page