সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ০২:৩৩ অপরাহ্ন
Headline
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা শহিদ মাহবুবার রহমানের পুত্র লাবিব আহসানের আবেঘগন স্টাটাস
/ ৯ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০২৫, ৪:২৭ অপরাহ্ন

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা শহিদ মাহবুবার রহমানের পুত্র লাবিব আহসান নিজের ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাঁর স্ট্যাটাস নিচে তুলে ধরা হলোঃ
পিতার শাহাদাতের ঘটনার পর দশ সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম পুরুষ হিসেবে একদম শূন্য হাতে ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম শুরু হলো আমার। একদিকে জীবিকা অর্জনের নিষ্ঠুর তাড়না, অন্যদিকে শহীদ পিতার মামলার বাদী হিসেবে ঘন ঘন ঢাকা টু রংপুর যাতায়াত করতে করতে আমার জীবন হয়ে উঠল দুর্বিষহ। সাথে আছে পিতার ওপর চাপিয়ে দেওয়া একটি ষড়যন্ত্রকারী মহলের আরোপিত ঋণ পরিশোধের টেনশন। এই ত্রিমাত্রিক চাপে আমি মানসিকভাবে রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়ে পড়লাম।

পাঁচ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে প্রায় অর্ধ ডজনেরও বেশিবার রংপুর কোর্টে যেতে হলো। ঘন্টার পর ঘন্টা উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো কোর্টের বারান্দায়। আমার সঙ্গে কতক তৃণমূল কর্মী ছাড়া আর কেউ নেই। আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে বিস্ময়কর এক ঔদাসিন্য লক্ষ্য করলাম। মনে হলো— আমি এবং তৃণমূল কর্মীরা যত প্রবল আন্তরিকতা নিয়ে এই নির্মম কাজটির পেছনের কুশীলবদের শাস্তি চাচ্ছি, নেতৃবৃন্দ সেভাবে চাচ্ছেন না! কারণ অজানা। একপর্যায়ে মামলাটির ব্যাপারে আশাই ছেড়ে দিলাম।

একদিন জানতে পারলাম— এই আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে সকলকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। তার মানে, আমার শহীদ পিতার ঘাতকরাও এই ক্ষমার অন্তর্ভুক্ত! তবে আমরা পারিবারিকভাবে চাইলে মুভ করতে পারি। রাজনৈতিক মামলায় রাজনৈতিক প্রেশারের প্রয়োজন হয়। কোনো অসহায় শহীদ পরিবার নিজস্ব প্রচেষ্টায় মামলার ফলাফল বের করে নিয়ে আসতে পারে না। খুব আফসোস লাগল— যে মানুষগুলো পুরোটা জীবন এ আন্দোলনের পেছনে ব্যয় করে গেলেন, এমনকি দিয়ে গেলেন নিজের জীবনটাও; তাঁদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দায়িত্ব নাকি আর আন্দোলন নেবে না! এ দায়িত্ব কেবলই পরিবারের।

একটি অসাধু মহল আমার শহীদ পিতার সারল্যের সুযোগ নিয়ে তাঁকে ট্র্যাপে ফেলেছিল, অত্যন্ত নির্দয়ভাবে তাঁর কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছিল কয়েক লক্ষ টাকার ঋণের বোঝা। হ্যাঁ, তাঁর সারল্যের কারণে আন্দোলন তাঁকে ভৎসনা করতে পারে, কিন্তু ডিজঔন তো করতে পারে না! বিশেষত তাঁর শহীদ হবার পর তো এই সমস্যার সমাধান করা আন্দোলনের একটি দায়িত্বই হয়ে দাঁড়ায়। শাহাদাত-পরবর্তী সময়গুলোতে শীর্ষ থেকে লোকাল নেতৃত্ব পর্যন্ত একটি কথারই ঝংকার শুনলাম— শহীদের ওপর আরোপিত ঋণের ব্যাপারটি দেখা হবে।

কিন্তু নামমাত্র কিছু কন্ট্রিবিউট করে ক্ষান্ত দেওয়া হলো। এতে যে পাওনাদাররা টাকা পেলেন না, তাদের ক্ষিপ্ত করে তোলারই একটা বন্দোবস্ত করা হলো মূলত। অথচ আন্দোলন সিরিয়াসলি চাইলে সেই ষড়যন্ত্রকারী মহলটিকে বিষয়টি সুরাহা করতে বাধ্য করা খুব কঠিন ছিল না। তাদের সাথে আমি একা লড়াই করে পরাভূত হলাম। সেটি সম্ভব না হলে যাকাত ফান্ড থেকেও একজন শহীদের পাশে দাঁড়ানো যেতে পারতো। এ আন্দোলন লক্ষ লক্ষ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে প্রতিদিন। সেটিও সম্ভব না হলে শহীদের স্থাবর সম্পত্তি বিক্রির বন্দোবস্ত করে দেওয়া যেত। আমার মতো দুর্বল তরুণের পক্ষে একটি বাড়ি বিক্রি করতে পারা নিতান্তই কঠিন কাজ।

তারপরও একদল বুরবক আমাকে আজ আবার ‘ফোরাম’ দেখাতে আসবে। তাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি— আমি এই আন্দোলনের কোনো লিস্টেড ম্যানপাওয়ার না, একজন শুভানুধ্যায়ী মাত্র। আমার কোনো ফোরাম নাই। এই জনতাই আমার ফোরাম। পাশের মানুষের ঘুম ভেঙে যাবে বলে যে অঙ্গনে নিজের তীব্র ব্যথা সত্বেও চিৎকার করা যায় না, চুপচাপ সহ্য করে যেতে হয়; সেই ফোরাম নিয়ে আপনিই থাকেন! আমার পিতা এই আন্দোলনের লিস্টেড জনশক্তি ছিলেন এবং আমি দেখেছি— তাঁর দল শাহাদাতের আগে এবং পরে কী নির্দয় আচরণ করেছে তাঁর সাথে!

এই এক বছরে কোনো শীর্ষ নেতাকে আমি আমাদের খোঁজ নিতে দেখিনি। কেউ জিজ্ঞেস করেনি— শহীদের ঋণগুলোর কি অবস্থা? মামলাটার কি খবর? দলের শীর্ষ নেতা পাশেই শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতে এসে লক্ষ লক্ষ টাকা অ্যাসাউন্স করে যান আর নিজ দলের শহীদ কর্মীর জন্য বরাদ্দ করেন বিশ হাজার টাকা! কারণ আবু সাঈদকে দিলে মিডিয়া কাভারেজ পাওয়া যাবে, এখানে দিলে পাওয়া যাবে না। এখন প্রশ্ন হতে পারে— একজন শুভানুধ্যায়ী হিসেবে এ আন্দোলন নিয়ে কি আমি হতাশ? আমার উত্তর হলো— না, আমি আশাবাদী।

আমি স্বপ্ন দেখি— শীঘ্রই নূহের প্লাবনের মতো কোনো এক ভয়াল প্লাবন এসে সর্বস্তরের এই অথর্ব, করাপ্টেড, ক্ষমতালোলুপ নেতৃত্বকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে দূরে বহুদূরে। সেই সাথে তাদের দলান্ধ, নেতান্ধ কর্মীদেরকেও; যারা নিজেরা থাপ্পড় খাওয়ার আগ পর্যন্ত সচরাচর অন্ধকারকেও সমর্থন করে যেতে থাকে অন্ধভাবে। তাদের স্থলে ইতিহাসের মঞ্চে এসে দাঁড়াবেন ইবনুল খাত্তাব, মুসা বিন নুসাঈর, তারিক বিন যিয়াদের মতো প্রবল সত্যাশ্রয়ী নেতৃত্ব, ধরবেন এই পবিত্র আন্দোলনের হাল। তাঁরা দাঁড়িয়ে থেকে আমার এবং আরও হাজারও হতভাগ্য সন্তানের শহীদ পিতার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন। আর কোনো শহীদের সন্তানকে আমার মতো হয়রানির শিকার হতে হবে না কোনোদিন।

‘অন্তিম অব্যক্ত কথামালা’/ লাবিব আহসান

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Our Like Page