বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ০৪:২১ অপরাহ্ন
Headline
প্রিয় লেখকের মৃত্যু দিবস শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছে রাকিন
/ ২ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৮ মে, ২০২৫, ৯:৫১ পূর্বাহ্ন

ডিআইইউ প্রতিবেদক,

মৃত্যু কি সহজ, কি নিঃশব্দে আসে
অথচ মানুষ চিরকালই জীবন নিয়ে গর্ব করে যায় ! 

“মরে যাওয়া মানুষ জীবিতদের মনে যে প্রতিক্রিয়া রেখে যায় তার দায় বইতে হয় অনেকদিন, কারো কারো ক্ষেত্রে সারা জীবন।”- সমরেশ মজুমদার।

প্রিয় লেখক সমরেশ মজুমদার স্যার , আশা করি ওপারে আপনার ঈশ্বর আপনাকে ভালই রেখেছেন । আজ নাকি আপনার মৃত্যুবার্ষিকী ! অথচ আমি জানতাম কীর্তিমানের মৃত্যু নাই ! আপনার কৃতিত্বে আপনি অমর ।

আপনাকে নিয়ে নতুন করে আমার লিখার আর কিছুই নেই ।  তবুও কিছু কথা না লিখলেই নয় , প্রিয় লেখক বলে কথা ! আজ অব্দি আপনার লিখা ২১ টি বই পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে । আলহামদুলিল্লাহ! শুরুটা “গর্ভধারিণী” দিয়ে,

বইটা পড়ে আমি অঝরে কেঁদেছি। আমার সার্জিল ভাইয়াকে প্রায়  ফোনে কথা বলতে শুনতাম সে তার বন্ধুকে বলতো এই বইটা পড়িস , এই বইটা পড়িস। সে আমারে কখনো বলে নাই এই বইটা পড়িস। কাজেই আমি তাকে না বলে তার বইটা আমি ব্যাগে করে হলে নিয়ে এসে ছিলাম পড়ার জন্য। ৪০২ পেজের  বই  ।

 

যে যতই সাহসী মানুষ হোক না কেন আমার মনে হয় না কেউ গর্ভধারিনী বই দুই বার বা তিনবার পড়ে শেষ করতে পারবে বিশেষ করে পাহাড়ে ওঠার পর থেকে। অমায়িক একটা বই !  আমি আমার মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এই বই পড়ার অনুভূতিটা ভুলবো না ।

 

 আমি অতীতের যতগুলো বই পড়ছি সবগুলোর অনুভূতি আর এই একটা বই পড়ার অনুভূতির মধ্যে আকাশ জমিন পার্থক্য । বইটা শেষ করার পর চার পাঁচ দিন আমার মধ্যে দিয়ে কি গেছে তা একমাত্র আমি আর আল্লাহই ভালো জানি। অবশেষে হলে থাকতে না পেরে দশ দিনের জন্য বাসায় চলে গেছিলাম আর কাকতালীয়ভাবে তখন মিড টার্ম শেষ হয়েছে জাস্ট। এত ভয়ংকর সুন্দর ভালোবাসার বই পৃথিবীতে আর কয়টি আছে আমার জানা নেই । এখনো সেই বইয়ের কথা মনে পড়লে বুক কেঁপে ওঠে। 

 

 

 এরপর একে একে— “কথা হয়ে গেছে”, “এই আমি রেনু”, “মেয়েরা যেমন হয়”, “জনযাজক”, “সাতকাহন”, “আমাকে চাই”, “কেউ কেউ একা”, “কেউ বোঝে না”, “ভালো থেকো ভালোবাসা”, “মনের মতো মন”, “অনেকেই একা”, “উজাড়”, “একাকিনী”, “উনকি”, “উত্তরাধিকার”, “কালবেলা”, “কালপুরুষ” ,”মৌষলকাল”,”দায় বন্ধন” ।

 

কিনে রেখেছি আরও বেশ কয়েকটি বই— “জলের নিচে প্রথম প্রেম”, “প্রিয় আমার”, “আলোক রেখা”, “কোথায় যাবে সে”, “আট কুঠুরি নয় দরজা”, “হিরে বসানো সোনার ফুল”, “অসুখলতার ফুল”, “সমরেশের সেরা ১০১”। এগুলো পড়ার অপেক্ষায় রেখেছি।

 

 

 

আপনার লেখা মৌষলকাল বইটি পড়ে জানতে পেরেছিলাম অনিমেষের চরিত্রে শুধু অনিমেষ নেই বরং আপনার কিছু জীবনচিত্র অনিমেষের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।  মৌষলকাল বইয়ে আপনি একটি বাক্যে লিখেছিলেন অনিমেষের দাদার নাম সরিৎশেখর  মজুমদার।  তখনই আমার মনে হয়েছে যে, এই বই শুধু অনিমেষের চরিত্র নয় আপনারও চরিত্রের অংশ বিশেষ ।

 

তার বেশ কয়েকদিন পরে আপনার একটি ইন্টারভিউতে জানতে পারি আপনি নিজেই বলছেন , অনিমেষের চরিত্রে আপনার জীবনের ৩০ শতাংশ তুলে ধরা হয়েছে বা তারও কম । ভাবতে অবাক লাগছিল যে আপনি আপনার জীবনের কিছু অংশ কত সুন্দর ভাবে তুলে ধরলেন ! আচ্ছা স্যার, আপনার শৈশব কি আসলেই এত কষ্টের ছিল? আপনার আম্মু কী আসলেই______ ! নাকি ওটা শুধু কাল্পনিক মাত্র !

আমার খুব জানতে ইচ্ছে হয় !

 

 

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী “রাকিন” আরো লিখেন, 

 

 

উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ , এবং বিশেষ করে মৌষলকাল যা লিখা হয়েছে দীর্ঘ ২৫ বছর পর !  ভাবতেই অবাক লাগে এই একটি বই লিখতে আপনার ২৫ বছর এর চেয়ে বেশি সময় লেগেছে । প্রকৃত জীবনের প্রতিচ্ছবি এই বইগুলোতেই উল্লেখ পেয়েছি । একাধারে এই চারটি বই চোখের সামনে রেখেছি যেন জীবনকে দেখতে পাই ।

 মাঝে মাঝে জানালায় দাঁড়িয়ে ভাবি অনিমেষের কথা । সেই ছোট্ট একটা বাচ্চার জীবন কিভাবে চোখের পলকে কেটে গেলো বইয়ের মধ্যে ! ভাবতেই অবাক লাগে জীবন কত দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে ! মাঝে মাঝে খুব মনে হয় সময়কে আঁকড়ে ধরি , যেন চলে না যেতে পারে ! তবুও সময় চলে যায় । কোথাও শুনেছিলাম সময়ের কাছে এত সময় নেই যে সে তোমারে দ্বিতীয়বারের মতো সময় দিবে !

 

কিন্তু বিশ্বাস করেন , আমার মনে হয় আপনার লিখা বইগুলো পড়তে আরো অসীম সময়ের প্রয়োজন !আপনার লিখা বই অনেক মানুষের জীবনের পরিবর্তনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে । শুধু মনে হয় সারা জীবন আপনার লিখা বইয়ের পাতায় ডুব দিয়ে থাকি ! আপনার লিখা বইয়ে কি জাদু আছে তা তো আজ অব্দি বুঝে উঠতে পারলাম না ! শুধু এতটুকু বুঝতে পারি আপনার এই লিখার কৃতিত্বে আপনি অমর । যতদিন পর্যন্ত আপনার লিখা একটি বই মানুষ পড়বে ততদিন আপনি পাঠকের অন্তরে জীবিত থাকবেন !

 

 

 দুই বছর আগে আপনাকে চিনতাম না। আপনার লেখা পড়তেও তেমন আগ্রহ ছিল না। অথচ আজ, দুই বছর পর, আপনার বই ছাড়া অন্য কোনো বই পড়তে ভালো লাগে না। মনে হয়, পৃথিবীর এক জীবন ভালোবাসার জন্য আর বই পড়ার জন্য বড়ই ক্ষুদ্র! আপনার লিখার কৃতিত্বে আপনি অমর।

 

আপনার লিখা বইয়ের ভাষায় বলতে চাই ” আমরা কাউকে অকারণে মনে রেখে দেই চিরকাল, যাকে হয়তো আমাদের মনে রাখার কোনও কথাই নেই!” – আপনাকে ও আপনার লিখাকে আমার মনে থাকবে চিরকাল !

 

 

আপনার কিছু অমর উক্তি না দিলেই নয়—

 

ঈশ্বর যদি মানুষকে অন্তত একদিনের জন্যে অন্যের মনের কথা পড়ার ক্ষমতা দিতেন,তা হলে নব্বইভাগ মানুষ কেউ কারও সঙ্গে থাকতে পারত না ।

 

যে মানুষ নিজে ইচ্ছে করে হারিয়ে যেতে চায় তাকে কেউ খুঁজে বের করতে পারে ?

 

কে যে কাকে ভালোবাসে, তা শুধু ঈশ্বরই জানেন!

 

সমস্ত বাসের লোক অবাক হয়ে দেখল, ঝাড়িকাকু কান্না গিলতে গিলতে বলল, ‘আমি আর বেশীদিন বাঁচব না রে, তোকে আর আমি দেখতে পাব না-তুই ফিরে এসে দেখবি আমি নেই, মরে গেছি !

 

 

আমার শূন্যতাই ভালো লাগে, চারধার শূন্য হয়ে গেলে নিজেকে মূল্যবান মনে হয়।

 

মানুষকে ভালবাসা দিতে হবে। এদেশের মানুষের বড় কষ্ট ।

বইয়ে পড়তাম একটা মেয়ে জীবন একবারে ভালোবাসে, ভালোবেসে মরে, মরে শহীদ হয়ে যায়!

সব মানুষের হৃদপিণ্ডই এক শব্দ করে তবে সবার দুঃখ সমান হয় না । কেন?

 ঈশ্বর ! এই চোখে এতো জল থাকে কেন?

আমি সবুজ ভালোবাসি ,নধর ঘাসেরা যখন সবুজ গালিচা হয়ে থাকে তখন মনে বড় মায়া আসে । প্রয়োজনে এগিয়ে যেতে হলে সেই ঘাসে পা ফেলে যেতে হয় । কিন্তু ফুলের ওপর পা ফেলে হাঁটা বড় কষ্টের।

ভালবাসার মূলমন্ত্র যদি আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয় তবে যে কোনও ব্যাপারেই মানিয়ে নেওয়া চলে।

আমি নদীর মত । প্রতিটি ঘাটের মানুষ মনে করে আমি তার । শুধু আমিই জানি না।

একসঙ্গে দীর্ঘকাল বাস করেও মানুষের সঙ্গে মানুষের চেনাশোনা হয় না।

পেছনের দিকে তাকালে কি মনে হয়?’ জিজ্ঞাসা করলাম।

পেছনে? সেখানে শুধু ছায়া। ছায়া তো আমি নই।

 যদিও ছায়াটা আমারই কিন্তু আমি আমাকে নিয়ে ভাবতে চাই। ছায়াকে নিয়ে নয় ! 

কত মানুষ তো এই পৃথিবীতে এখনও রয়েছে যারা আমার জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে, যাদের জীবনের কোথাও আমি নেই। 

এই যে কথা থেকে কথা মনে পড়ে যাওয়া, গন্ধ থেকে স্মৃতি ফিরে পাওয়া, ভারী চমৎকার ব্যাপার !

প্রাকৃতিক এই মহাশক্তির কাছে আমি কী নিঃসহায়!

নীরবে চেয়ে থাকা কি অপরাধ ?
আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি , জানি না কি আশায় তবু অপেক্ষা করে আছি।

তুমি যখন যেভাবেই ফিরে আসো, তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার সাধ্য আমার নেই। তুমি আমার রক্তে মিশে গেছো আর রক্ত কিভাবে ধুয়ে ফেলতে হয় আমি জানি না!

তুমি হয়তো অসাধারণ নয়। কিন্তু সাধারণের সঙ্গে তোমার মেলে না। আমি তাই চাই।
মানুষের মনের কথা কী সহজে পড়ে ফেললে!

আমার, আমার খুব একা লাগছে, ভীষণ ইচ্ছে করছে কেউ কথা বলুন, আপনি আমার সঙ্গে দয়া করে কথা বলবেন?

নিজের বোকামি বুঝতে পারার পর; কারো দুঃখ হয়, কারো হাসি পায়।

তখন এখানে কিছু প্রজাপতি উড়ছিল। মেঘ ভাঙা ভাঙা রোদ ঘরে ঘরে পড়ছিল। আকাশের নীল শাড়িতে জড়িয়ে তুমি এলে। উড়ুক্কু চুল কপাল থেকে সরালে। বললে, ভালোবাসা নয়, অন্য কথা বলো।

থমক লাগল মনে। তোমার কথা ভাবতেই যার পৃথিবীর সবকিছু একসাথে সরে যায়, বিন্দু বিন্দু হয়ে মিলিয়ে যায়, তখন আশ্বিনের সকাল হয়ে যাওয়া মনে শুধু তুমি আর তুমি, সেই তোমাকে দেখে ভালোবাসা ছাড়া আর অন্য কথা কী করে জন্ম নেবে ? হয়তো আমার মুখে ছায়া ঘন হয়েছিল, হয়তো কপালের শিরায় নীল ফুটে উঠেছিল, তাই তুমি হাসলে আর অমসিন গজদাঁতে ঝিলিক উঠল। বললে, বেশ, ভালোবাসার তুমি কী জানো?

নদী বয়ে যাচ্ছিল গর্বিত হয়ে, আকাশের নীল মেখে। শুধু তুমি নেই। কোথাও তুমি নেই। তাই কেউ এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করছে না ভালোবাসা কাকে বলে?

কিন্তু আমি এই হৃদয় নিংড়ে উচ্চারণ করেছি নীরবে, যেখানেই থাকো, ভালো থাকো, ভালোবাসা।
ভালোবাসা কখনো কৃতজ্ঞতা থেকে জন্মায় । কৃতজ্ঞতা মানুষকে নম্র করে হয়তো সেই নম্রতা সইতে শেখায় । সয়ে গেলে একসময় ভালোবাসা তৈরি হয়ে যায়। – সমরেশ মজুমদার স্যার ।

মোঃ সিদরাতুল মুনতাহা রাকিন
অর্থনীতি বিভাগ,
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Our Like Page